বর্তমানে আমরা সকলেই টিউবলাইট দেখে এসেছি, কিন্তু এই টিউবলাইট কিভাবে কাজ করে এই সম্পর্কে জানিনা। বিশেষ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য টিউবলাইট সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। কারণ বিভিন্ন প্রশ্ন পত্রে টিউবলাইট সম্পর্কিত প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।
আর এজন্যই আমরা আজকের নিবন্ধনে টিউব লাইটে কি গ্যাস থাকে ও টিউব লাইটে চোক কয়েলের কাজ কি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। মূলত টিউব লাইট কিভাবে কাজ করে এবং টিউবলাইট সম্পর্কিত সকল তথ্যগুলো তুলে ধরা হবে।
টিউব লাইটে কি গ্যাস থাকে সম্পর্কে যদি বিস্তারিত তথ্য জানার আগ্রহ থাকে তাহলে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। পাশাপাশি টিউব লাইটে চোক কয়েলের কাজ কি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
টিউব লাইট এর ভিতরে সাধারণত প্রচুর তাপমাত্রা উৎপন্ন হয়। এজন্য টিউবলাইট এর ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিষ্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহার করা হয়। তাই টিউবলাইট এর ভিতরে নিষ্ক্রিয় হিলিয়াম গ্যাস থাকে। হিলিয়াম গ্যাস নিষ্ক্রিয় মৌল।
যার কারণে হিলিয়ামের পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিসাবে আর্গন গ্যাস ও নিয়ন গ্যাস ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া টিউবলাইট এর মধ্যে পারদ দেওয়া থাকে। তবে বর্তমানে টিউবলাইট গুলোতে নিয়ন গ্যাস দেওয়া থাকে।
যার ফলে টিউবলাইট গুলো দীর্ঘস্থায়ী চলতে থাকে। তাছাড়াও টিউবলাইট বিভিন্ন স্তর নিয়ে গঠিত। যেগুলো আমরা পরের অংশে জানতে পারবো।
টিউব লাইটে চোক কয়েলের কাজ কি এই সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। তাই আমরা জানানোর জন্য এখন বিস্তারিত আলোচনা করব। অবশ্যই শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। বিশেষ করে যারা বিজ্ঞানের স্টুডেন্ট রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো জানা খুবই জরুরী। কারণ তাদেরকে এই বিষয়ে অনেক সময় প্রশ্ন করা হয় এবং পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে দেখা যায়।
আমরা যখন টিউবলাইট জ্বালাই তখন টিউবলাইট এর ভেতর দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহিত কারেন্টের পরিমাণ নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য টিউবলাইট এর উপরে লোহার কোরের উপর পেঁচানো একটি কয়েল যুক্ত করা হয় ,এই কয়েলকে চোক কয়েল বলা হয়।
এখানে মূলত টিউবলাইটে কারেন্ট প্রবাহের পরিমাণ যেন না বেড়ে যায় এজন্যই এই চোক কয়েল ব্যবহার করা হয়। চোক কয়েলকে সাধারণত আবার ইণ্ডাক্টার কয়েলও বলা হয়ে থাকে। চোক কয়েল সাধারণত লাইটের সাথে সিরিজ কানেকশনে থাকে।
চোক কয়েল এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার কারণে এটি লাইটে ব্যবহার করা হয়। চলুন সেই বৈশিষ্ট্য গুলো জেনে নেই।টিউবলাইট অন করার সাথে সাথে চোখ কয়েল ৮০০-১০০০ ভোল্টেজ উৎপন্ন করে।
তাছাড়াও টিউবলাইটের পরিবর্তিত কারেন্ট প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।চোক কয়েল এর মাধ্যমে টিউবলাইট জ্বলে থাকে। এই কয়েল এর মাধ্যমে কারেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে ভোল্টেজ ঠিক রাখা যায়। সাধারণত লাইটের সাথে সিরিজের সংযুক্ত করা হয়।
চোক কয়েল সাপ্লাই লাইনের দিকে টিউবের সাথে সিরিজে সংযুক্ত থাকে। বাতির সুইচ অন করার পর বাতি স্বাভাবিক আলো দিতে প্রায় তিন সেকেন্ড সময় লাগে। টিউব লাইট স্টার্টিং এর সময় প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ ভোল্টেজ প্রয়োজন হয়।
আর এই ভোল্টেজ স্টার্টার শর্ট সার্কিট এর এর মাধ্যমে তৈরি হয়। এভাবে চোক কয়েলের মাধ্যমে টিউব লাইট জ্বলে থাকে। তাছাড়া আরো অনেক উপাদান রয়েছে যার সাহায্যে টিউবলাইট জ্বলে থাকে সেগুলো আমরা পরের অংশে আলোচনা করব।
টিউব লাইট কত ওয়াট
আপনি কি জানেন টিউব লাইট কত ওয়াট হয়ে থাকে। চলুন বিস্তারিত জেনে আসি।
- টিউব লাইটটি যদি ২ ফুটের হয় তাহলে এটি ২০ ওয়াট হয়ে থাকে।
- টিউব লাইট ৪ ফুটের হয়ে থাকলে সেটি ৪০ ওয়াট ধরা হয়।
তবে বর্তমানে অনেক ধরনের টিউবলাইট বের হয়েছে যেগুলো মূলত ৬০ ওয়াট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
টিউব লাইটের স্টার্টার এর কাজ কি
টিউব লাইটের স্টাটার এর কাজ কি এ সম্পর্কে জানার আগে অবশ্যই স্টাটার এর গঠন সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে আপনারা এর কাজ সহ এটা কিভাবে কাজ করে এ সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। এখানে স্টাটার এর মধ্যে একটি সার্কিট থাকে। সার্কিটের পাশে একটি ক্যাপাসিটির থাকে।
এখানে সার্কিটে বাম পাশে একটি বায়োমেটালিক স্টিপ থাকে। আর আরেকটি ডান পাশে থাকে স্টেট স্টিপ। এখানে যখন টিউব লাইটের সুইচ অন করা হয় তখন স্টাটারে বিদ্যুৎ আসার পর স্টার্টার এর ভেতরের বায়োমেটালিক স্টিপ গরম হওয়া শুরু করে এবং স্ট্রিপটি সোজা হওয়ার চেষ্টা করে।
বায়োমেটালিক স্টিপ সোজা হওয়ার ফলে স্টেট স্টিপ এর সাথে সংযোগ হয়। এর ফলে কারেন্ট বায়মেটালিক স্টিপ এর মধ্য দিয়ে গিয়ে স্টেট স্টিপ এর মাধ্যমে এক টার্মিনাল থেকে অপর টার্মিনালে যায়। ফলে টিউবলাইট জ্বলতে থাকে।
এখানে মূলত স্টার্টারের বায়োমেটালিক পাত অপরদিকে সোজা হওয়ার কারণে স্টেট পাত শর্ট সার্কিট হয়। যখন টিউবলাইট জ্বলে তখন আর স্টেট স্টিপ পাতের মধ্য দিয়ে আর কারেন্ট চলাচল করে না। এসময় টিউবের মধ্যে থাকা গ্যাসের মাধ্যমে কারেন্ট প্রবাহিত হয়ে থাকে।
এর ফলে তখন আর স্টার্টার এর কাজ আর থাকেনা। ফলে স্টাটারের সার্কিটে থাকা মেটাল গুলো ঠান্ডা হতে শুরু করে এবং শর্ট সার্কিটের মুখ খুলে যায়। এভাবে টিউব লাইটের স্টার্টার কাজ করে।
টিউব লাইটের কয়টি অংশ
আমরা সকলেই জানি টিউবলাইটকে অপর নামে ফ্লোরোসেন্ট বাল্ব বলা হয়। বৈদ্যুতিক বাতি সাধারণত তিন প্রকার হয়ে থাকে।
- ফিলামেন্ট ল্যাম্প
- আর্ক ল্যাম্প
- গ্যাস ডিসচার্জ ল্যাম্প
তবে এর মধ্যে থেকে গ্যাস ডিসচার্জ আবার ৮ প্রকারের হয়ে থাকে। একটি লম্বা কাচ নলের মধ্যে অর্থাৎ ভিতরে সামান্য আর্গণ ও মার্কারি গ্যাসের সমন্বয়ে যে আলোক শক্তি পাওয়া যায় তাকে আমরা টিউবলাইট বলে থাকি।
আর এই আর্গন ও মার্কারি নিষ্ক্রিয় গ্যাস বিধায় এগুলো টিউবলাইট ব্যবহার করা হয়। আর টিউবলাইট জ্বলানোর ক্ষেত্রে ব্যালাস্টার ব্যবহার হয়ে থাকে। এখানে ব্যালাস্টার এর কাজ হল লো ভোল্টেজকে হাই ভোল্টেজ করা এবং হাই ভোল্টেজকে লো ভোল্টেজ করা।
টিউব লাইট কিভাবে কাজ করে
আপনারা জানেন টিউবলাইট জ্বলাতে হলে এর জন্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক জিনিস প্রয়োজন হয়। সেগুলো হলোঃ স্টাটার, চোক কয়েল বা ব্যালাস্টার। আমরা হয়তো পূর্বে জেনেছেন চোক কয়েল টিউব লাইট এর সাথে সিরিজ কানেকশনে থাকে এবং এটি ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে , তাছাড়াও ভোল্টেজ বৃদ্ধি করতে পারে।
আমরা যখন টিউবলাইট এর সুইচ অন করি। তখন বিদ্যুৎ প্রবাহ প্রথমেই স্টাটারে যায়। স্ট্যাটাসের ভিতরে থাকা দুই প্রান্ত গরম হতে থাকে। এরপর টিউবলাইট এর ভিতরে গ্যাস গুলো ইলেকট্রিক ডিসচার্জ করা শুরু করে। এখন স্টাটারের প্রান্ত দুটি মিলিত হওয়ার ফলে টিউবলাইটের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন চলাচল করতে থাকে।
এর ফলে গ্যাস গুলো উত্তপ্ত হয়ে একপ্রকার রশ্নি তৈরি করে। যা আমরা আলো হিসেবে পায়। এভাবেই টিউবলাইট বা ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প কাজ করে থাকে। তাছাড়া এর কাজ বিস্তারিত আমরা উপরের অংশে আলোচনা করেছি।
টিউব লাইট এর দাম কত?
টিউবলাইট বিভিন্ন দামের মধ্যে হয়ে থাকে। কারণ বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি টিউবলাইট তৈরি করে আসছে। তাই তাদের দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়। আপনি যদি সেই পুরাতন টিউব লাইট কিনতে চান তাহলে এর দাম পড়বে ১২০ টাকা প্রতি পিস।
তবে বর্তমানে এলইডি টিউবলাইট বের হয়েছে যেগুলোর দাম প্রায় ৪০০ – ৫০০ টাকার মতো। তবে আপনি যদি সেই আগের পুরাতন নরমাল টিউবলাইট কিনতে চান তাহলে এটির দাম মাত্র ১২০ – ১৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
টিউবলাইট সাধারণত ২০ ওয়াট ও ৪০ ওয়াটের হয়ে থাকে। টিউবলাইটের ওয়াট অনুযায়ী দাম কম বেশি হয়ে থাকে। আপনারা দেখে শুনে দামদর করে কিনবেন।
টিউব লাইট কত ভোল্টেজে চলে
টিউবলাইট সাধারণত ১১০ ভোল্টেজে চলে। আপনার হয়তো অনেকে এ সম্পর্কে জানে না। আমরা বাসা বাড়িতে ২৩০ ভোল্ট কারেন্ট পেয়ে থাকি। এখানে টিউবলাইট এর ক্ষেত্রে ( ২৩০ -১১০) = ১২০ বাকি থাকে। এই বাকি ১২০ ভোল্ট চোক কয়েল বা ব্যালাস্টার নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। যার ফলে টিউবলাইট ১১০ ভোল্টেযে জ্বলে থাকে।
FAQs
টিউব লাইটে কি গ্যাস ব্যবহার করা হয়?
টিউব লাইটে সাধারণত আর্গণ ও নিয়ন গ্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে দেখা গেছে কিছু ক্ষেত্রে হিলিয়াম ও নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
টিউব লাইটের জন্য চোক কয়েল লাগে কেন?
টিউব লাইটে এ চোক কয়েল ফিলামেন্টে উচ্চ ভোল্টেজ সংগ্রহ করে এবং ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
টিউব লাইট কি অতিবেগুনি রশ্মি নির্গত করে?
হ্যাঁ , টিউব লাইট অতিবেগুনি রশ্মি নির্গত করে। তবে অতি বেগুনি রশ্মি খুব কম পরিমাণে নির্গত করে থাকে। এতে আমাদের কোন ক্ষতি হয় না।
টিউব লাইট কি দিয়ে তৈরি?
টিউব লাইট সরু কাঁচের নল দিয়ে তৈরি এবং এর নলের ভিতরে থাকে মার্কারি এবং নিষ্ক্রিয় গ্যাস।
টিউব লাইট এর অপর নাম কি?
টিউবলাইট এর অপর নাম ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প।
কোন বাল্বে আর্গন থাকে?
সাধারণত টিউবলাইট বা ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্পে আর্গন থাকে।
টিউব লাইট কত ওয়াটের হয়?
টিউব লাইট ২ ফুট হলে ২০ ওয়াট হয় এবং ৪ ফুট হলে টিউবলাইট ৪০ ওয়াটের হয়ে থাকে।
শেষ কথা
টিউব লাইটে কি গ্যাস থাকে ও টিউব লাইটে চোক কয়েলের কাজ কি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি। আর্টিকেলটি পড়ার পর অবশ্যই বিস্তারিত বুঝতে পারলেন। যদি কোন কিছু বুঝতে না পারেন তাহলে আমাদের জানাতে পারেন আমরা সাহায্য করার চেষ্টা করব।
শিক্ষার্থী বন্ধুরা টিউবলাইট সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখুন ভবিষ্যতে আপনাদের কাজে আসবে।বিশেষ করে যারা সাইন্সের স্টুডেন্ট আছেন তারা এগুলো জানবেন। বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা সহ বোর্ড পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্নগুলো এসে থাকে। বিভিন্ন
তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুন।
টিউব লাইট কত ওয়াট