ত্বকের চুলকানি এবং দাউদ, এই দুটি সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। এই সমস্যাগুলোর কারণ, লক্ষণ এবং সঠিক চিকিৎসা জানা থাকলে, আমরা সহজেই এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিচে কিছু প্রাথমিক আলোচনা এবং কিভাবে প্রতিকার করা যায় সেইটা নিয়ে আলোচনা করব।
চুলকানি এর কারণ (Pruritus):
- শুষ্ক ত্বক: শীতকালে বা আর্দ্রতার অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে চুলকাতে পারে।
- অ্যালার্জি: খাবার, ওষুধ, বা কসমেটিক্সের অ্যালার্জির কারণে চুলকানি হতে পারে।
- আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে : এগুলো ছোঁয়াচে রোগ তাই আশে পাশের আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে এ রোগ হওয়া স্বাভাবিক ।
- পোকামাকড়ের কামড়: মশা, ছারপোকা, বা অন্যান্য পোকামাকড়ের কামড়ে চুলকানি হয়।
- ছত্রাক সংক্রমণ: দাউদ, ক্যানডিডা, বা অন্যান্য ছত্রাক সংক্রমণে চুলকানি হয়।
- মানসিক চাপ: মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ চুলকানি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- অন্যান্য রোগ: ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, বা লিভার রোগের কারণেও চুলকানি হতে পারে।
চুলকানির লক্ষণগুলো :
- ত্বকে ক্রমাগত চুলকানির অনুভূতি।
- লালচে ভাব বা ফুসকুড়ি।
- ত্বকের শুষ্কতা বা ফাটল।
আরো পড়ুন : রোজা ভঙ্গের ১৯ টি কারণ ! রোজা নিয়ে আরও কিছু প্রশ্নের জবাব !
চুলকানির চিকিৎসা:

Unix-C Lotion:
শুষ্ক ত্বকের চুলকানির জন্য এটি একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার লোশন।
- ব্যবহার: প্রত্যেক সপ্তাহে পুরো 1 টি করে বোতল পুরো শরীর এ পাতলা করে লাগান এবং আক্রান্ত স্থানে বেশি করে লাগিয়ে ফেলুন ।
- দাম: ১৪০ টাকা (পরিবর্তনশীল)।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কয়েকদিন ব্যবহার করুন।
Topiklo-D S:
এটি একটি স্টেরয়েড ক্রিম, যা প্রদাহ এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
ব্যবহার: দিনে ১-২ বার আক্রান্ত স্থানে পাতলা করে লাগান।
দাম: ২৫০ টাকা (পরিবর্তনশীল)।
সতর্কতা: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ৭ দিনের বেশি ব্যবহার করবেন না।
দাউদ এর কারণ (Ringworm):
- ছত্রাক সংক্রমণ: ডার্মাটোফাইট নামক ছত্রাকের কারণে দাউদ হয়।
- সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা।
- সংক্রমিত প্রাণীর সংস্পর্শে আসা।
- দূষিত মাটি বা বস্তুর সংস্পর্শে আসা।
দাউদ এর লক্ষণগুলো:
- লাল, গোলাকার ফুসকুড়ি, যার মাঝখানে পরিষ্কার ত্বক থাকে।
- ফুসকুড়িতে চুলকানি এবং জ্বালা।
- ত্বকের আঁশ ওঠা।
- ত্বকে কিছু কিছু জায়গায় বর্ডার এর মত হয়ে যাওয়া ।
দাউদ এর চিকিৎসা:
- Lulliconazole (Luli Kill):
- এটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম, যা দাউদের চিকিৎসায় কার্যকর।
- ব্যবহার: দিনে ২ বার আক্রান্ত স্থানে পাতলা করে লাগান।
- দাম: ১২০-১৫০ টাকা (পরিবর্তনশীল)।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহার করুন।
- সতর্কতা: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করবেন না। চোখ, মুখ বা যোনীপথে ব্যবহার করা উচিত নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এই ওষুধটি ব্যবহার করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: সাধারণত ত্বকের কনটাক্ট ডার্মাটাইটিস এবং সেলুলাইটিস হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার :
- দাউদের সাথে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থাকলে ব্যবহার করুন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ডোজ এবং সময়কাল অনুসরণ করুন।
- দাম: ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ অনুযায়ী।
Itraconazole (Itrazen):
- গুরুতর দাউদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ডোজ এবং সময়কাল অনুসরণ করুন। তবে 1 মাস খেতে হবে সকাল আর রাতে ।
- দাম: প্রত্যেক পাতায় 10 টি করে ঔষধ থাকে এবং প্রতিটির মূল্য 20 টাকা অর্থাৎ প্রতি পাতার মূল্য 200 টাকা মাত্র ।
- টিপস: এই ওষুধটি খাবার পরে গ্রহণ করা ভালো।
- সতর্কতা: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করবেন না। লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি উপযুক্ত নাও হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
পুরুষাঙ্গ এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ সতর্কতা:
- পুরুষাঙ্গে এই ওষুধগুলো ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে সাবধানে ব্যবহার করতে পারেন ।
- কিছু ওষুধ পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল ত্বকের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
- বিশেষ করে স্টেরয়েড ক্রিম (যেমন Topiklo-D S) দীর্ঘ সময় ধরে পুরুষাঙ্গে ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এটি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
- ছত্রাক সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম (যেমন Lulliconazole) ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
- গর্ভবতী মহিলাদের কোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- কিছু ওষুধ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- বিশেষ করে স্টেরয়েড ক্রিম এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে, প্রাকৃতিক প্রতিকার এবং নিরাপদ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- গর্ভবতী মায়েরা যদি চুলকানি বা দাউদের সমস্যায় ভোগেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত সতর্কতা:
- শিশুদের ক্ষেত্রেও যেকোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- নিজের থেকে ওষুধ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
- যেকোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে ওষুধের প্যাকেজে দেওয়া নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ুন।
- ওষুধ ব্যবহারের পরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
সাধারণ টিপস:
- ঢিলেঢালা, সুতির পোশাক পরুন।
- চুলকানি কমাতে ঠান্ডা কম্প্রেস ব্যবহার করুন।
- ত্বক আর্দ্র রাখুন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
- মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
Disclaimer:
দামের পরিবর্তন হতে পারে, তাই কেনার আগে দাম যাচাই করে নিন। এই তথ্যগুলো শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। যেকোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
যতবার দেখা হয়েছে 454
Nice information