দাবানলের কবলে ইসরায়েল , জুলুমের ফল কি এরকমই হয়?

জেরুজালেমের ভয়াবহ দাবানল: দখলদারদের দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বনি? ফিলিস্তিনের আর্তনাদ কি প্রকৃতির প্রতিশোধ?

জেরুজালেমের উপকণ্ঠে সম্প্রতি যে ভয়াবহ দাবানলের লেলিহান শিখা আকাশ স্পর্শ করেছে, তা কেবল এক নিদারুণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের চিত্র নয়। বরং, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের উপর চালানো অবিচারের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের এক ভয়ংকর বহিঃপ্রকাশ কি না, সেই প্রশ্ন আজ বিশ্ববিবেককে নাড়া দিচ্ছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে জুলুমের কালো মেঘ ফিলিস্তিনের আকাশে জমেছে, নিরীহ মানুষের রক্ত আর অশ্রুজলে ভেজা মাটি কি অবশেষে আগুনের রূপ ধরে তাদের দখলদারদের অভিশাপ দিচ্ছে?

দাবানলের ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতি

সংবাদ সূত্রে জানা যায়, এই ভয়াবহ দাবানলের কারণে জেরুজালেমের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোতে এক চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার বাসিন্দা তাদের প্রিয় ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে বাধ্য হয়েছে। আগুনের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, নয়টি বসতি মুহূর্তের মধ্যে ভস্মীভূত হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, এই দাবানলের গ্রাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক ট্যাঙ্কগুলোও রেহাই পায়নি, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বহু মূল্যবান সরঞ্জাম। অ্যাশডড রেলপথের কাছাকাছি ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল যে, দখলদার ইসরায়েলি সরকার বাধ্য হয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত অগ্নিনির্বাপণকারী দলকে তলব করে।

দাবানলের কারণ: দুর্ঘটনা নাকি ইচ্ছাকৃত?

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেট সন্দেহ করছে, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো আগুন। এই সন্দেহের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে, প্রশ্ন জাগে, কেন এমন ঘটনা ঘটবে? বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন, তাদের ভূমি দখল, নির্বিচারে হত্যা এবং ঘরবাড়ি ধ্বংসের যে নারকীয় খেলা চলছে, তারই কি এই দাবানল এক ভয়ঙ্কর পরিণতি? এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাতের ইতিহাস এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নীতি বহু আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত। এমন পরিস্থিতিতে এই দাবানলের কারণ অনুসন্ধানে আরও গভীরে যাওয়া প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক সাহায্য ও ইসরায়েলের পদক্ষেপ

ইসরায়েলের বিদেশমন্ত্রী গিডিওন সা’র এই ভয়াবহ দাবানলের মোকাবিলায় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং স্পেনের মতো কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। তবে, আশ্চর্যজনকভাবে, সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, কোনো অগ্নিনির্বাপক বিমান এখনও পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি, এবং উদ্ধারকাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাц আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন, যা পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা স্পষ্ট করে তোলে। জেরুজালেম ফায়ার ডিপার্টমেন্টের কমান্ডার এই দাবানলকে সম্ভবত ইসরায়েলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন। আগুনের কারণে তেল আবিব এবং জেরুজালেমের মধ্যে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং তাদের সাহায্য প্রদানের ধীরগতিও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বের নীরবতা ও ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ

আজ যখন জেরুজালেমের আকাশ আগুনের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, তখন বিশ্ববাসী হয়তো নীরবে প্রত্যক্ষ করছে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য। কিন্তু এই দাবানলের লেলিহান শিখা শুধু একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিপর্যয় নয়, বরং এটি গোটা বিশ্বের বিবেকের উপর এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে। দশকের পর দশক ধরে চলে আসা অবিচারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত কন্ঠ কবে সোচ্চার হবে? কবে ফিলিস্তিনের আকাশেও বইবে শান্তির বাতাস? এই ভয়াবহ দাবানলের প্রেক্ষাপটে সেই প্রশ্নগুলো আরও জোরালো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি কেবল দর্শকের ভূমিকায় থাকবে, নাকি তারা এই দীর্ঘদিনের সংঘাতের একটি স্থায়ী ও ন্যায়সঙ্গত সমাধানে এগিয়ে আসবে? ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ আজ এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে নিমজ্জিত, এবং এই দাবানল সেই অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

আশার আলো

আমরা বিশ্বাস করি, এই জেরুজালেমের ভয়াবহ দাবানল হয়তো দখলদারদের পতনের এক অশুভ সঙ্কেত। হয়তো এই আগুনের ভস্ম থেকে জন্ম নেবে এক নতুন ফিলিস্তিন, যেখানে শান্তি, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। বিশ্ববাসী সেই প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে, যেদিন ফিলিস্তিনের আকাশে উড়বে মুক্তির পতাকা, যেদিন থামবে জুলুমের কালো রাত। সেই নতুন ভোরের আলোয় হয়তো দীর্ঘদিনের চাপা কান্না প্রশমিত হবে এবং এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এই দাবানল হয়তো সেই নতুন দিগন্তের পূর্বাভাস, যেখানে নিপীড়িত মানুষের দীর্ঘশ্বাস অবশেষে শান্তিতে পরিণত হবে।

যতবার দেখা হয়েছে 49
Avatar photo

S.M.YAMIN HASAN

আমি S.M.YAMIN HASAN ।

Articles: 14
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments