আসরের নামাজ আদায় করার সঠিক নিয়ম

আসরের নামাজের সঠিক নিয়ম  (ওযু, নিয়ম, দোয়া ও ফযীলত সহ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!
আসরের নামাজের সঠিক নিয়ম ও দোয়া নিয়ে Trickus এ আপনার জন্য নিয়ে এলাম সহজ ও বিস্তারিত গাইড!

 ওযু করার নিয়ম । (সূরা মায়িদা ৬)

  1. নিয়ত করা: মনে মনে বলুন, “আমি আসরের নামাজের ওযু করছি।”
  2. বিসমিল্লাহ বলা: “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে শুরু করুন।
  3. হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া: ডান হাত ৩ বার, তারপর বাম হাত ৩ বার ধুয়ে নিন।
  4. কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া: ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করুন ৩ বার এবং নাকে পানি দিন ৩ বার।
  5. মুখমণ্ডল ধোয়া: চুলের গোড়া থেকে থুতনি পর্যন্ত মুখমণ্ডল ৩ বার ধুয়ে নিন।
  6. হাত কনুইসহ ধোয়া: ডান হাত কনুইসহ ৩ বার, তারপর বাম হাত কনুইসহ ৩ বার ধুয়ে নিন।
  7. মাথা মাসেহ: ভেজা হাত দিয়ে মাথা মাসেহ করুন ১ বার।
  8. কান মাসেহ: কান মাসেহ করুন, ভেতর ও বাইরে উভয় অংশে।
  9. পা টাখনুসহ ধোয়া: ডান পা টাখনুসহ ৩ বার, তারপর বাম পা টাখনুসহ ৩ বার ধুয়ে নিন।

* প্রতিটি অঙ্গ ধোয়ার সময় ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহমি দোয়া পড়া মুস্তাহাব।

 আসরের নামাজের সময়

আসরের নামাজের সময় শুরু হয় যোহরের নামাজের সময় শেষ হওয়ার পর এবং শেষ হয় সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত। সাধারণত বাংলাদেশে এই সময়টি বিকাল ৩:৩০ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই সময়ে নামাজ আদায় করা ফরয।

* সূর্য লাল হয়ে গেলে বা ডুবে যাওয়ার আগেই নামাজ আদায় করে নেওয়া উত্তম।

 আসরের নামাজের নিয়ম

৪ রাকাত ফরয:

  • নিয়ত করা: মনে মনে বলুন, “আমি আসরের ৪ রাকাত ফরয নামাজ পড়ছি।”
  • তাকবিরে তাহরিমা: “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করুন।
  • ছানা পড়া: “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা…” পড়ুন।
  • সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা: সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা পড়ুন।
  • রুকু: “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” ৩ বার পড়ুন।
  • সিজদা: “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” ৩ বার পড়ুন।
  • দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পড়ে রুকু ও সিজদা করুন।
  • তাশাহহুদ পড়া: দ্বিতীয় রাকাতে বসে তাশাহহুদ পড়ুন।
  • তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত: সূরা ফাতিহা পড়ে রুকু ও সিজদা করুন।
  • দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়া: শেষ রাকাতে বসে দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ুন।
  • সালাম ফেরানো: ডান ও বাম দিকে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে সালাম ফেরান।

ছানা (নামাজের শুরুতে)

আরবী:

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

বাংলা উচ্চারণ: “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি, তোমার প্রশংসা করি, তোমার নাম মর্যাদাশীল, তোমার মহিমা সুউচ্চ, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই”

তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু)

আরবী: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

বাংলা উচ্চারণ: “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাতু। আস সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন। আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু”

অর্থ: “সমস্ত সম্মান, ইবাদত ও উত্তম কথা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বারাকাতও। আমাদের উপর এবং আল্লাহর সকল সৎ বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল

 দরুদ শরীফ

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ, وبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِْيدٌ مَجِيْدٌ

উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা সল্লি-আলা মুহাম্মাদি ওয়া’ আলা-আলি মুম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া’ আলা-আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা-আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া’ আলা-আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সঃ) ও তাঁর বংশধরের প্রতি রহমত নাযিল করুন। যেমন রহমত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত নাযিল করুন। যেমন বরকত নাযিল করেছিলে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।

 দোয়া মাসুরা (নামাজ শেষে)

আরবী:

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

বাংলা উচ্চারণ: “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান্নার”

অর্থ: “হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন”

📌 আসরের নামাজের গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

  • আসরের নামাজের সময় সূর্যাস্তের আগেই আদায় করে নেওয়া উত্তম।
  • জামাতে নামাজ পড়লে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য সূরা না পড়া।
  • নামাজে ধীরস্থিরতা বজায় রাখা এবং প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে করা জরুরি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার তাওফিক দিন। আমীন!
ভালো থাকবেন সবাই, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। 😊

যতবার দেখা হয়েছে 48
Avatar photo

S.M.YAMIN HASAN

আমি S.M.YAMIN HASAN ।

Articles: 17
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments