স্মার্টফোন কেনার পর আফসোস করতে না চাইলে এই আর্টিকেল টি দেখুন!

আধুনিক জীবনে স্মার্টফোন শুধু একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন সঙ্গী হয়ে উঠেছে। ছবি তোলা, ভিডিও দেখা, অনলাইন কাজ করা, গেম খেলা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতি বছর বাজারে নতুন নতুন সব ফিচার নিয়ে স্মার্টফোন আসছে, যা আমাদের স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করছে। একটি নতুন স্মার্টফোন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা অপরিহার্য। এই আর্টিকেলে আমরা সেই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, সাথে থাকবে উদাহরণ যা আপনাকে সঠিক ফোনটি বেছে নিতে সাহায্য করবে।

পারফরমেন্স ও প্রসেসর

স্মার্টফোনের ভেতরের প্রসেসর হলো তার মস্তিষ্ক। এটি ফোনের অ্যাপ্লিকেশন চালানো, মাল্টিটাস্কিং এবং গেম খেলার মতো জটিল কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। প্রসেসরের ক্ষমতা সরাসরি ফোনের গতি এবং স্মুথনেসের উপর প্রভাব ফেলে।

* প্রসেসর জেনারেশন: নতুন ফোন কেনার সময় লেটেস্ট জেনারেশনের প্রসেসরযুক্ত মডেলগুলো চয়েস এ রাখা উচিত ।

* উদাহরণ: বর্তমানে বাজারে কোয়ালকমের Snapdragon 8 Gen 4 অথবা mediatek এর Dimensity 9400 প্রসেসরগুলো খুবই শক্তিশালী। এই প্রসেসরগুলো দিয়ে ভারী গেম খেলা অথবা অনেক অ্যাপ একসাথে চালালেও ফোন ল্যাগ করবে না। পুরনো Snapdragon 8 Gen 2 বা Dimensity 9200 প্রসেসরও ভালো, তবে নতুনগুলোর তুলনায় পারফরমেন্স এর দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে।

কোর সংখ্যা ও ক্লক স্পিড

প্রসেসরের কোর সংখ্যা এবং ক্লক স্পিড যত বেশি হবে, ফোন তত দ্রুত এবং স্মুথলি কাজ করবে।

* উদাহরণ: একটি অক্টা-কোর (আটটি কোর) প্রসেসর একটি হেক্সা-কোর (ছয়টি কোর) প্রসেসরের চেয়ে সাধারণত মাল্টিটাস্কিংয়ে ভালো পারফর্ম করে। ক্লক স্পিড যেমন 3.0 GHz বা 3.2 GHz জর মাধ্যমে বোঝা যায় প্রসেসর প্রতি সেকেন্ডে কতগুলো অপারেশন করতে পারে।

RAM (র‍্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি)

RAM একই সময়ে একাধিক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু রাখতে সাহায্য করে, ফলে অ্যাপ দ্রুত লোড হয়।

* উদাহরণ: যদি আপনি অনেক অ্যাপ ব্যবহার করেন এবং চান সেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকুক, তাহলে ৮ GB বা ১২ GB RAM এর ফোন আপনার জন্য ভালো হবে। ৪ GB বা ৬ GB RAM এর ফোনগুলোতে অনেক অ্যাপ একসাথে খুললে ফোন স্লো হয়ে যেতে পারে। তবে বাজেট কম থাকলে 6 GB RAM নিতে পারেন ।

আরো দেখুন: টপ 5 টি ফ্রি ইমেজ জেনারেটর AI ওয়েবসাইট

ডিসপ্লে (Display)

স্মার্টফোনের ডিসপ্লে এর ওপর আমাদের  স্ক্রীন এর কালার, আউটডোর ব্রাইটনেস নির্ভর করে। রেজোলিউশন, রিফ্রেশ রেট এর জন্য ভালো ডিসপ্লে টেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ। ডিসপ্লের রেজোলিউশন যত বেশি, ছবি , ভিডিও ,গ্রাফিক্স তত পরিষ্কার এবং ডিটেইলড দেখাবে।

* উদাহরণ: ফুল এইচডি+ (FHD+) (যেমন 1080 x 2400 পিক্সেল) সাধারণ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট ভালো, তবে কোয়াড এইচডি+ (QHD+) (যেমন 1440 x 3200 পিক্সেল) ডিসপ্লে আরও সূক্ষ্ম এবং ডিটেইলড ছবি দেখায়, যা ভিডিও দেখা বা গেম খেলার সময় আরও ভালো লাগে।

রিফ্রেশ রেট

স্ক্রিনের রিফ্রেশ রেট যত বেশি, স্ক্রলিং এবং অ্যানিমেশন তত স্মথ হবে।

* উদাহরণ: একটি স্ট্যান্ডার্ড ৬০Hz ডিসপ্লের তুলনায় ১২০Hz বা ১৪৪Hz রিফ্রেশ রেটের ডিসপ্লেতে স্ক্রল করলে বা গেম খেললে অনেক বেশি স্মুথ মনে হয়। বিশেষ করে ফাস্ট-পেসড গেম খেলার সময় এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ডিসপ্লে প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের ডিসপ্লে রয়েছে, যেমন LCD, OLED, AMOLED ইত্যাদি।
AMOLED ডিসপ্লেগুলো সাধারণত LCD ডিসপ্লের তুলনায় উন্নত কালার অ্যাক্যুরেসি, গভীর কালো রঙ এবং উজ্জ্বলতা প্রদান করে। LTPO (LowTemperature Polycrystalline Oxide) প্রযুক্তি কিছু প্রিমিয়াম ফোনে ব্যবহৃত হয়, যা স্ক্রিনের রিফ্রেশ রেটকে কনটেন্টের সাথে অ্যাডজাস্ট করে ব্যাটারি সাশ্রয় করে। Samsung এর Super AMOLED বা OnePlus এর Fluid AMOLED ডিসপ্লেগুলো খুব জনপ্রিয়।

ক্যামেরা (Camera)

* মেগাপিক্সেল: মেগাপিক্সেল ছবির রেজোলিউশন নির্দেশ করে। তবে শুধু মেগাপিক্সেল বেশি হলেই ভালো ছবি হয় না, সেন্সরের আকার এবং লেন্সের গুণমানও ভালো হওয়া জরুরি।

* উদাহরণ: একটি ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দিয়েও ভালো ছবি তোলা সম্ভব যদি তার সেন্সর বড় হয় এবং লেন্স ভালো হয়। তবে বেশি মেগাপিক্সেল (যেমন ৪৮MP, ৬৪MP, ১০৮MP) ছবিকে ক্রপ করার পর বা বড় করে প্রিন্ট করার সময় বেশি ডিটেইল ধরে রাখতে পারে।

লেন্সের প্রকারভেদ

*আল্ট্রা-ওয়াইড: লেন্স দিয়ে প্রশস্ত ছবি তোলা যায় (যেমন ল্যান্ডস্কেপ)। *টেলিফটো: লেন্স দূরের বস্তু জুম ইন করার জন্য ব্যবহার করা হয় (অপটিক্যাল জুম কোয়ালিটি না হারিয়ে জুম করতে সাহায্য করে)।      *ম্যাক্রো: লেন্স দিয়ে খুব কাছ থেকে ছোট বস্তুর ছবি তোলা যায় (যেমন ফুলের পাপড়ি)।

* অ্যাপারচার: লেন্সের অ্যাপারচার যত কম হবে (যেমন f/1.8, f/1.6), আলো প্রবেশের পরিমাণ তত বেশি হবে এবং কম আলোতেও ভালো ছবি তোলা যাবে।

* উদাহরণ: f/1.8 অ্যাপারচারের একটি লেন্স f/2.2 অ্যাপারচারের লেন্সের তুলনায় কম আলোতে উজ্জ্বল ছবি তুলতে পারবে।

ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন

অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (OIS) এবং ইলেকট্রনিক ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (EIS) হাত কাঁপা বা মুভমেন্টের সময় ছবি ও ভিডিওকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

        * উদাহরণ: OIS ফিচার থাকলে ভিডিও করার সময় ঝাঁকুনি কম হয় এবং স্থির ছবি তোলার সময় ছবি ব্লার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

ব্যাটারি ও চার্জিং

একটি স্মার্টফোনের ব্যাটারি লাইফ এবং চার্জিং স্পিড দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটারির ক্ষমতা mAh (মিলিঅ্যাম্পিয়ার-আওয়ার)-এ মাপা হয়। যত বেশি mAh, ফোন তত দীর্ঘ সময় ধরে চলবে।

        * উদাহরণ: ৪০০০ mAh ব্যাটারির একটি ফোন সাধারণ ব্যবহারে সারাদিন চলতে পারে, তবে ভারী ব্যবহারকারীদের জন্য ৫০০০ mAh বা তার বেশি ব্যাটারির ফোন ভালো।

* ফাস্ট চার্জিং: বর্তমানে ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি খুব দরকারি। কত ওয়াটের চার্জিং সাপোর্ট করে এবং কত দ্রুত ফোন চার্জ হয় তা দেখে নেওয়া উচিত।একটি ১২০W ফাস্ট চার্জিং অ্যাডাপ্টার দিয়ে একটি ফোন মাত্র ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে ০ থেকে ১০০% চার্জ করা সম্ভব। যেখানে একটি ১৫W চার্জার দিয়ে চার্জ করতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগতে পারে।

স্টোরেজ (Storage)

অ্যাপ্লিকেশন, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য ডেটা সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত স্টোরেজ প্রয়োজন। বর্তমানে ১২৮GB, ২৫৬GB, ৫১২GB বা এমনকি ১TB ইন্টারনাল স্টোরেজযুক্ত ফোন পাওয়া যাচ্ছে। আপনার ব্যবহারের ধরণ অনুযায়ী সঠিক স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বেছে নেওয়া উচিত।

       * উদাহরণ: যদি আপনি প্রচুর ছবি ও ভিডিও তোলেন এবং অনেক অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাহলে ২৫৬GB বা ৫১২GB স্টোরেজের ফোন আপনার জন্য ভালো হবে।

ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি

একটি স্মার্টফোনের সুন্দর বাহ্যিক ডিজাইন তার প্রিমিয়ামনেস বজায় রাখে।গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম বা সেরামিকের মতো উন্নত উপকরণ ব্যবহার করা ফোনগুলোকে আরও আকর্ষণীয় এবং টেকসই করে তোলে।

* ওয়াটার ও ডাস্ট রেসিস্টেন্স: IP রেটিং (Ingress Protection)  নিশ্চিত করে যে ফোনটি পানি ও ধুলো প্রতিরোধী কিনা। IP68 রেটিং এর একটি ফোন ১.৫ মিটার গভীর পানিতে ৩০ মিনিট পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে এবং এটি ধুলোবালি প্রতিরোধীও।

সফটওয়্যার ও আপডেট

একটি স্মার্টফোনের সফটওয়্যার অভিজ্ঞতা এবং নিয়মিত আপডেট তার পারফরমেন্স এবং সিকিউরিটি উন্নত করে । অপারেটিং সিস্টেম 2 প্রকার । অ্যান্ড্রয়েড (Android) এবং আইওএস (iOS) হলো প্রধান দুটি অপারেটিং সিস্টেম। উভয়েরই নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো সাধারণত কাস্টমাইজেশনের সুযোগ বেশি দেয়, অন্যদিকে আইওএস তার সিকিউরিটি এবং অ্যাপলের ইকোসিস্টেমের জন্য পরিচিত।

* আপডেট: নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট ফোনের নিরাপত্তা এবং পারফরমেন্স জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফোন প্রস্তুতকারক কতদিন পর্যন্ত আপডেট প্রদান করবে তা জেনে নেওয়া উচিত।

   যেমন : Google Pixel ফোনগুলো সাধারণত ৩ বছর পর্যন্ত প্রধান ওএস আপডেট এবং ৫ বছর পর্যন্ত নিরাপত্তা আপডেট পায়। Samsung ও এখন অনেক ফোনে ৪ বছর পর্যন্ত ওএস আপডেট এবং ৫ বছর পর্যন্ত নিরাপত্তা আপডেট দিচ্ছে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফিচার

* নেটওয়ার্ক ও কানেক্টিভিটি: 5G সাপোর্ট, ওয়াই-ফাই স্ট্যান্ডার্ড (যেমন Wi-Fi 6E বা Wi-Fi 7) এবং ব্লুটুথ সংস্করণ (যেমন Bluetooth 5.3) দেখে নিন। NFC (Near-Field Communication) মোবাইল পেমেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তবে এইটা অপশনাল রাখতে পারেন ।

* সেন্সর: ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর (ইন-ডিসপ্লে বা সাইড-মাউন্টেড), ফেস আনলক এবং অন্যান্য সেন্সরগুলোর কার্যকারিতা যাচাই করুন।

* স্পিকার ও অডিও: ভালো মানের স্টেরিও স্পিকার এবং অডিও কোয়ালিটি মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। Dolby Atmos বা Hi-Res Audio সাপোর্ট আছে কিনা দেখে নিন।

Samsung, Apple, Xiaomi, OnePlus এর মতো ব্র্যান্ডগুলোর সাধারণত বাংলাদেশে ভালো সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। কেনার আগে আপনার এলাকার সার্ভিস সেন্টার সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো।

সবশেষে আপনার বাজেট কত তা নির্ধারণ করা জরুরি। বাজারে বিভিন্ন দামের ফোন পাওয়া যায়। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা ফোনটি বেছে নিতে হবে।

যতবার দেখা হয়েছে 36
Avatar photo

S.M.YAMIN HASAN

আমি S.M.YAMIN HASAN ।

Articles: 15
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments