ফজরের নামাজ আদায় করার সঠিক নিয়ম।

💧 ওযুর ধাপসমূহ (সূরা মায়িদা ৬)

  1. নিয়ত করা: মনে মনে বলুন, “আমি ফজরের নামাজের ওযু করছি।”
  2. বিসমিল্লাহ বলা: “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে শুরু করুন।
  3. হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া: ডান হাত ৩ বার, তারপর বাম হাত ৩ বার ধুয়ে নিন।
  4. কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া: ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করুন ৩ বার এবং নাকে পানি দিন ৩ বার।
  5. মুখমণ্ডল ধোয়া: চুলের গোড়া থেকে থুতনি পর্যন্ত মুখমণ্ডল ৩ বার ধুয়ে নিন।
  6. হাত কনুইসহ ধোয়া: ডান হাত কনুইসহ ৩ বার, তারপর বাম হাত কনুইসহ ৩ বার ধুয়ে নিন।
  7. মাথা মাসেহ: ভেজা হাত দিয়ে মাথা মাসেহ করুন ১ বার।
  8. কান মাসেহ: কান মাসেহ করুন, ভেতর ও বাইরে উভয় অংশে।
  9. পা টাখনুসহ ধোয়া: ডান পা টাখনুসহ ৩ বার, তারপর বাম পা টাখনুসহ ৩ বার ধুয়ে নিন।

* প্রতিটি অঙ্গ ধোয়ার সময় ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহমি দোয়া পড়া মুস্তাহাব

⏰ ফজরের নামাজের সময়

ফজরের নামাজের সময় শুরু হয় সুবহে সাদিক থেকে এবং শেষ হয় সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত। সাধারণত বাংলাদেশে এই সময়টি ভোর ৪:৩০ থেকে ৫:৩০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই সময়ে নামাজ আদায় করা ফরয, এবং এটি ইসলামের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি।

* সুবহে সাদিক হলো ভোরের সেই সময় যখন পূর্ব আকাশে সাদা আলোর রেখা দেখা যায়, কিন্তু সূর্যোদয় হয়নি।

🏠 ঘরে ফজরের নামাজের নিয়ম

২ রাকাত সুন্নত: সকল দোয়া নিচে দেওয়া আছে  ।

  • তাকবিরে তাহরিমা: “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করুন।
  • ছানা পড়া: “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা…” পড়ুন।
  • সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা: সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা (সূরা কাফিরুন বা সূরা ইখলাস) পড়ুন।
  • রুকু: “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” ৩ বার পড়ুন।
  • সিজদা: “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” ৩ বার পড়ুন।
  • তাশাহহুদ পড়া: দ্বিতীয় রাকাতে বসে তাশাহহুদ পড়ুন।
  • দরূদ শরীফ পড়া: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ…” পড়ুন।
  • দোয়া মাসুরা পড়া: “রাব্বানা আতিনা…” পড়ুন।
  • সালাম ফেরানো: ডান ও বাম দিকে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে সালাম ফেরান।
  • হাশরের শেষ 3 আয়াত পাঠ করা ।

২ রাকাত ফরয : সকল দোয়া নিচে দেওয়া আছে

  • তাকবিরে তাহরিমা: “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করুন।
  • ছানা পড়া: “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা…” পড়ুন।
  • সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা: সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা পড়ুন।
  • রুকু: “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” ৩ বার পড়ুন।
  • সিজদা: “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” ৩ বার পড়ুন।
  • তাশাহহুদ পড়া: দ্বিতীয় রাকাতে বসে তাশাহহুদ পড়ুন।
  • দরূদ শরীফ পড়া: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ…” পড়ুন।
  • দোয়া মাসুরা পড়া: “রাব্বানা আতিনা…” পড়ুন।
  • সালাম ফেরানো: ডান ও বাম দিকে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে সালাম ফেরান।
  • হাশরের শেষ 3 আয়াত পাঠ করা ।

🕌 জামাতে ফজরের নামাজের নিয়ম

২ রাকাত সুন্নত: সকল দোয়া নিচে দেওয়া আছে

  • জামাত শুরু হওয়ার আগেই সুন্নত পড়ে নিন: ঘরে পড়ার মতোই পড়ুন।

২ রাকাত ফরয:

  • ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে তাকবিরে তাহরিমা বলা: “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করুন।
  • ইমামের সাথে রুকু, সিজদা ও অন্যান্য কাজ করা: ইমামের সাথে সমন্বয় করে রুকু, সিজদা করুন।
  • ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য সূরা না পড়া: ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ুন, অন্য সূরা পড়বেন না।
  • তাশাহহুদ, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়া: বসে তাশাহহুদ, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ুন।
  • সালাম ফেরানো: ইমামের সাথে সালাম ফেরান।
  • হাশরের শেষ 3 আয়াত পাঠ করা ।

ফজরের নামাজে ব্যবহৃত দোয়াসমূহ

📖 ছানা (জায়নামাজের দোয়া)

আরবী: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

বাংলা উচ্চারণ: “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তোমার প্রশংসা করছি, তোমার নাম মর্যাদাশীল, তোমার মহিমা সুউচ্চ, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই”

🕌 তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু)

আরবী: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

বাংলা উচ্চারণ: “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাতু। আস সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন। আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু”

অর্থ: “সমস্ত সম্মান, ইবাদত ও উত্তম কথা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বারাকাতও। আমাদের উপর এবং আল্লাহর সকল সৎ বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল”

🌹 দরুদ শরীফ

আরবী: اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আালি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আালি ইবরাহীমা, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”

অর্থ: “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহিমান্বিত”

🙏 দোয়া কুনুত (বিতর নামাজে)

আরবী: اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাহদিনি ফীমান হাদাইত, ওয়া আাফিনি ফীমান আাফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানি ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বারিক লি ফিমা আ’তাইত, ওয়া কিনি শার্রা মা কাদাইত, ফাইন্নাকা তাকদি ওয়া লা ইউকদা আলাইক, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াজিল্লু মাও ওয়াল্লাইত, তাবারাকতা রাব্বানা ওয়া তা’আালাইত”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাকে হিদায়াতপ্রাপ্তদের সাথে হিদায়াত দান করুন, সুস্থদের সাথে সুস্থতা দিন, মুত্তাকীদের সাথে সম্পর্ক রাখুন, যা দিয়েছেন তাতে বারাকাত দিন, আপনার সিদ্ধান্তের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। নিশ্চয়ই আপনি ফয়সালা করেন, আপনার উপর ফয়সালা করা হয় না। যাকে আপনি বন্ধু বানান, সে কখনো হীন হয় না”

📖 সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফযীলত (৫৯:২২-২৪)

🔹 এই আয়াতগুলো ফজরের সুন্নত নামাজের পর পড়লে ৭০ হাজার ফেরেশতা সকাল পর্যন্ত দোয়া করে (তিরমিযি)।

🔹 এই আয়াতগুলো পড়লে আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতা সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি হয় এবং ঈমান বৃদ্ধি পায়।

📖 সূরা হাশর ৫৯:২২-২৪ (আরবী, উচ্চারণ ও অর্থ)

আরবী:

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ۖ هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ ﴿٢٢﴾ هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿٢٣﴾

বাংলা উচ্চারণ:
“হুওয়াল্লাহুল্লাজী লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলিমুল গাইবি ওয়াশ শাহাদাতি, হুওয়ার রাহমানুর রাহীম। হুওয়াল্লাহুল খালিকুল বারীউল মুসাওয়িরু, লাহুল আসমাউল হুসনা, ইউসাব্বিহু লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি, ওয়া হুওয়াল আজিজুল হাকীম”

অর্থ:
“তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, দৃশ্য-অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবক, আকৃতিদাতা। সব সুন্দর নাম তাঁরই। আসমান ও জমিনে যা আছে সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”

📌 নামাজের গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

  • সিজদায় গেলে কপাল ও নাক জমিনে স্পর্শ করানো ফরয
  • রুকুতে “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” কমপক্ষে ৩ বার বলা।
  • দোয়া কুনুত শুধু বিতর নামাজে পড়া হয় (হানাফি মাজহাব)
  • সালাম ফেরানোর সময় সম্পূর্ণ কাঁধের দিকে তাকানো সুন্নত ।
যতবার দেখা হয়েছে 440
Avatar photo

S.M.YAMIN HASAN

আমি S.M.YAMIN HASAN ।

Articles: 14
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
md.munna
Member
2 months ago

আত্তাহিয়্যাতু?